রাজনীতির গোড়ায় অরাজনৈতিকতার প্রয়োজনীয়তা

আদর্শ পোস্ট ফরম্যাট

শমীক সরকার, ফেবুপো, ২০১৬

স্থান-কাল-পাত্র বিচার না করে কথাগুলো বলা নিঃসন্দেহে অরাজনৈতিক কাজ। কিন্তু রাজনীতির গোড়ায় যদি এই মৌলিক অরাজনৈতিকতা না থাকে, তাহলে কী দাঁড়ায়?

তাহলে রাজনীতি একটা স্বাধীন স্বাবলম্বী সত্ত্বা হয়ে ওঠে। রাজনীতি আর মানুষের বিষয় থাকে না, উল্টে মানুষ রাজনীতির বিষয় (পড়ুন চাকর-বাকর, গিনিপিগ) হয়ে যায়।

তখন বিভিন্ন রাজনীতিকে (এবং রাজনীতি ব্যাপারটাকেই কখনো কখনো) হাততালি বা গালাগালি দেওয়া ছাড়া মানুষের কোনো কাজ থাকে না।

রাজনীতির হায়ারার্কিতে যারা যত ওপরে, তারা তত এই মৌলিক অরাজনৈতিকতাকে ভয় পায়, এড়িয়ে যায়।

তর্ক : রাজনীতির সৃজন ও অন্যান্য

আদর্শ পোস্ট ফরম্যাট

শ, ফেপো, ২৫ নভেম্বর

কাল মিশরের একটি সুফি মসজিদে বোমা ও গুলি হামলায় শ’ তিনেক নামাজি মারা গেছে। মিশরের সামরিক রাষ্ট্রপ্রধান যোগ্য জবাব দেবেন বলেছেন। পাকিস্তান আফগানিস্তান ইরাক মিশর — এই ধরনের হামলা চলছেই। মাঝখানে দেখছিলাম, পাকিস্তানে একটি সুফি ধর্মস্থানে এই ধরনের একটি হামলার পর সেখানকার উদ্যোক্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ফের যেমন সুফি সংস্কৃতি চালিয়ে যাচ্ছিল তেমনই চালাবে, পার্টার্বড না হয়ে। সেটাই নাকি এই ধরনের হামলার উপযুক্ত জবাব। যদিও ওই হামলাটা ছিল ওই ধর্মস্থানে দ্বিতীয় হামলা। বিলোপবাদের নানা কালার আছে।

যুদ্ধশাস্ত্রে আছে, যখন রাজনীতি শেষ হয়ে যায়, তখন যুদ্ধের মাধ্যমে মীমাংসা করতে হয়। এই হামলাগুলোকে যতই সন্ত্রাসবাদী ইত্যাদি বলে যেন ভিনগ্রহের ভিলেনদের কারবার আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হোক না কেন, ওয়াকিবহাল লোকেরা ভালোই জানে, এগুলো আসলে যুদ্ধ। যে যুদ্ধ যুদ্ধের যে ‘এথিক্স’, যেমন নিরপরাধের ওপর আক্রমণ করবে না ইত্যাদি, তাকে পুনঃসংজ্ঞায়িত করে।

রাজনীতি কখন শেষ হয়ে যায়? যখন রাজনীতির সৃজন হয় না। দুনিয়াটা গাছ গাম্বাটে ভরে যায়। যখন রাজনীতি বা রাজনৈতিক দর্শনের সৃজনকে এড়িয়ে গিয়ে গয়ং গচ্ছ মনোভাবে প্রাতঃকৃত্যের স্টাইলে অরাজনৈতিক “রাজনীতি” করা হয় প্রতিদিন। যখন বুদ্ধিজীবী তার সমাজ নির্ধারিত কাজ ভুলে গিয়ে হয় সংগঠক হয়ে যায়, অথবা বিভিন্ন সভা সমিতিতে গিয়ে নিয়ম করে মাথা নাড়ে আর হাই তোলে। আর লোকে নাচা কোদা সংস্কৃতি করাটাকে ভাবে শ্রেষ্ঠ মানবিক কাজ।

এই মার্কেটে বাংলাবাদীদের-কে অভিনন্দন। এই মার্কেটে আদিবাসী কুর্মী আন্দোলনকে অভিনন্দন। এই মার্কেটে গোর্খা আন্দোলনকে অভিনন্দন। এই মার্কেটে সাইকেলবাদী আন্দোলনকে অভিনন্দন। এই মার্কেটে নারীবাদী জঙ্গী আন্দোলনকে অভিনন্দন। এই মার্কেটে আম্বেদকরবাদী জঙ্গী আন্দোলনকে অভিনন্দন। এই মার্কেটে পরিবেশবাদী জঙ্গী আন্দোলনকে অভিনন্দন। …

 

Continue reading

টিপ্পনি : ভোটের পরের নোট

আদর্শ পোস্ট ফরম্যাট

শস, ৬ মে ২০১৬

রাজনীতির লোকেদের ছুটি আজ থেকে। ভোট শেষ। কাজ শেষ।

রাজনৈতিক লোকেদের অবশ্য ছুটি নেই। রাজনৈতিক লোক মানে? প্রাক্তন সেফোলজিস্ট, প্রাক্তন আম আদমি পার্টি নেতা, অধুনা স্বরাজ আন্দোলনের নেতা যোগেন্দ্র যাদবের টুইটার অ্যাকাউন্টের ‘পরিচিতি’ সেকশনে যেমন বলা ছিল — ‘পলিটিক্যাল সায়েন্টিস্ট, পলিটিক্যাল অ্যাকটিভিস্ট … পলিটিক্যাল অ্যানিমাল’। রাজনৈতিক প্রাণী। সরকার নীতি বিরোধী উদ্দেশ্য আইন আন্দোলন পার্টি গণতন্ত্র কোর্ট প্রচার অধিকার সংস্কার — এসব নিয়ে তিনশো পঁয়ষট্টি দিন চব্বিশ ঘন্টা লেগেই আছে।

আর আছে হাঁফিয়ে ওঠা পিলপিলপিলপিল লোক। কাজ করতে করতে, বাজার করতে করতে, সংসার করতে করতে, রুটিন মানতে মানতে, চিলচিৎকার শুনতে শুনতে — হাঁফিয়ে ওঠা। যাদের প্রত্যেকের জীবন একেকটা আলাদা আলাদা গল্প — যদি মন দিয়ে শোনা যায়। কী অবলীলায় ‘তুচ্ছ’ আর ‘সিরিয়াস’ সব ব্যাপার এক নিঃশ্বাসে, নিজের ব্যাপার আর অন্যের ব্যাপার একই প্যারাগ্রাফে। আর না শুনলে? এলেবেলে। সাবঅল্টার্ন। নিপীড়িত। শ্রমিক। কৃষক। দলিত। ওই এক-একটা জাবদা ব্র্যাকেটেই সব ঢুকে যাবে।

সে যাকগে। যা বলছিলাম। তা এই হাঁফিয়ে ওঠা জীবনে তাল জ্ঞান ঠিক রাখাই দায়, তার ওপর আবার ঠিক ভুল বিচার! ওই নিজেদের দৈনন্দিনের পিঠে চড়েই জীবন নির্বাহ। কোথা কোথা দিয়ে গেলে? বলতে পারা যাবে না। নিজে নিজের ইতিহাস বলতে গেলে নিজেকে নিজের থেকে আলাদা হতে হয়। তা তো নয়! কঠিন করে বললে, অস্তিত্ব আছে, সত্ত্বা নেই।

নাকি অস্তিত্বটাই সত্ত্বা? দৈনন্দিনের হাসি কান্না ঠাট বাট আমোদ আহ্লাদ বাসনা যন্ত্রণা নিয়ে ওই পিলপিলপিলপিল সত্ত্বা। তরলের মতো। গ্যাসের মতো। হাজার ঢাকনা দাও, সেই এদিক ওদিক দিয়ে গলে গালে কোথায় কোথায় চলে যায়!

এবার রাজনীতি-কে যদি ওই নিজ-দৈনন্দিন নির্ভর, তরল, গ্যাসীয়, পিলপিল শত কোটি পৃথক সত্ত্বার প্রত্যেকটির ওপর বসানো হয়, তাহলে ?

রাজনীতির লোকেরা যা নিয়ে ‘জানকবুল’ করে, রাজনৈতিক লোকেরা যা নিয়ে মাথা খোঁড়ে অহর্নিশি, তাকে কি ভিডিও গেমসের চেয়ে বেশি কিছু বলে মনে হবে?

টিপ্পনি : রাজনীতির তৃতীয় পরিসর

আদর্শ পোস্ট ফরম্যাট

শস, ন-ডি২০১৪, মসা

সাধারণভাবে রাজনীতিকে ক্ষমতাকেন্দ্রিক হিসেবে দেখতেই আমরা অভ্যস্ত। তবে একটু ভাবলেই আমরা বুঝতে পারি, ক্ষমতার অনেক প্রকারভেদ আছে। রাজনীতি যে ক্ষমতাটিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়, তা রাজনৈতিক ক্ষমতা। তবে এই ক্ষমতাটি খুবই পরাক্রমী, তার সামনে অন্যান্য ক্ষমতা অনেক ম্লান।
রাজনৈতিক ক্ষমতা কী? সামাজিক মানুষের বিভিন্ন আশা-আকাঙ্ক্ষার ফারাকের ভারসাম্য রক্ষার পরাক্রম। সামাজিক মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার ফারাক অনেকটাই তৈরি হয় তার অবস্থান দিয়ে। লিঙ্গগত, জাতিগত, জাতগত, শ্রেণীগত, গোষ্ঠীগত, ধর্মগত অবস্থান, ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রতিটি অবস্থান খুব সুনির্দিষ্ট এবং তা অন্যটি থেকে স্পষ্টভাবে আলাদা। এই অবস্থানজনিত আশা আকাঙ্ক্ষাগুলির দরকষাকষি এবং তার সমাধানের মাধ্যমে মূলত ওই অবস্থানগুলিকেই আরও দৃঢ় করা এক ধরনের রাজনীতি। এক্ষেত্রে ক্ষমতার আরেকটি অতিরিক্ত ভূমিকা আছে। তা এই ভারসাম্যের দেখভাল করে। ভারসাম্যটি রক্ষার জন্য রয়েছে যে হাতিয়ারগুলি, সেগুলির দেখভাল করে। এটাকেই আমরা বলি রাষ্ট্র। আর ভারসাম্য রক্ষার হাতিয়ারটি কখনও আপাতদৃষ্টিতে খুব উদার হয়, আবার কখনও তা খড়্গহস্ত। যখন যেমন প্রয়োজন তখন তেমন আর কি। এই রাজনীতির পরিসরটি প্রথম পরিসর। এই রাজনীতি সামাজিক বিভাজনগুলিকে দুর্বল করে না, বরং বিভাজনগুলি ঠিকঠাক থাকার মধ্যেই এই রাজনীতির সার্থকতা, কারণ কেবল তাহলেই ‘ভারসাম্য রক্ষা করা’র কাজটি প্রাসঙ্গিকতা পায়। আরো পড়ুন